• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কালীগঞ্জে ভবন মালিকের অব্যবস্থাপনার কারণে অগ্নিদগ্ধ স্কুল শিক্ষক সুমার মৃত্যু

  • ''
  • প্রকাশিত ২৫ মার্চ ২০২৪

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

যে আগুনে দগ্ধ হয়ে ২২ দিন চিকিৎসা শেষে অকালে প্রান হারালেন সুমা ব্যানার্জি (৩৫), সেই আগুনেই তার নিথর দেহটি চিতার উপর দাউ দাউ করে পুড়ছে। আগুন লেগে সুমার শরীরে ২২ শতাংশ পোড়ার অসহ্য জ্বালা যন্ত্রনা থেকে চিরমুক্তি এবং বেঁচে থাকার সকল চেষ্টাকে ব্যার্থতায় পর্যবসিত করে চিরতরের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলেন অগ্নিদগ্ধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষক সুমা ব্যানার্জি। ৩ মার্চ বিকেল ৪ টার দিকে ৭ মাস আগে উঠা নিজ ভাড়া বাড়িতে সিড়ি ঘরে কৃষি ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার জেনারেটর বাস্ট হয়ে আগুন ধরে যায় পাশে থাকা ভবন মালিকের গাড়ির টায়ার ও ভোজ্য তেলে। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের তৎপরতায় আগুন নেভানো সম্ভব হলেও সৃষ্ট কালো ধোয়া সিড়ি ঘর বরাবর উঠে যায় ভবনের চতুর্থ তলা অব্দি। সে সময় আটকে পড়ে চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া সোমা ব্যানার্জি। উত্তপ্ত কালো ধোয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় বেশ কিছুক্ষণ পর স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তায় সুমাকে প্রধমে নেওয়া হয় কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোরে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। ওই রাতেই তাকে নেওয়া হয় ঢাকায় অবস্থিত শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে। সেখানে ভর্তি হয়ে ডাক্তার মৌসুমীর তত্ত্বাবধানে প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকা অকস্থায় হঠাৎ করে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের অবস্থান বেশি খারাপ হওয়ায় ২৪ মার্চ সকাল ৭ টায় তাকে নেওয়া হয় আইসিইউতে।

রাত ১০ টা ৫ মিনিট তখন ডাক্তার তাকে মমৃত ঘোষণা করলেন। সোমবার সকালে তার মরা দেহ কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে আনা হয়। সকলের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কাষ্টভাঙ্গা মহাশ্মশানে তার শেষ কীর্তি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। অবসর প্রাডÍ প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা সূর্যকান্ত ব্যানার্জি এবং অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাধুরা ব্যানার্জীর মেয়ে ছিলেন সুমা ব্যানার্জি। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী সুব্রত রায় স চৌধুরী শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এই দম্পতির দেবান্ত রায় চৌধুরী নামের অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া এক ছেলে ও অনুষ্কা রায় চৌধুরী নামে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া এক কন্যা সন্তান রয়েছে ।

কৃষি ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা ও ভবন মালিকের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতায়। একই ভবনে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ব্যবস্থা থাকলেও ভবন মালিক অগ্নিনির্বাপক এর কোন ব্যবস্থা রাখেন নি।একই সাথে কৃষি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার জেনারেটর স্থাপনে মানা হয়নি সঠিক নিয়ম নীতি। ফলেএই ধরনের অগ্নিকান্ডের মতো একটি ঘটনা ঘটেছে। তাই অকালেই প্রান হারাতে হয়েছে স্কুল শিক্ষক সুমা ব্যানার্জিকে। যে কারণে তারা মনে করেন নিহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণও কৃষি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখা ও তার ভবন মালিক মনোরঞ্জন শাহকেই দেওয়া উচিত। ভবনের মালিক মনোরঞ্জন সাহা বলেন, অসাবধানতা বশত কৃষি ব্যাংকের জেনারেটর থেকে আগুন ধরে। এখানে আমার কোন দায় নেই, সব দায় কৃষি ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার। কালীগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার শেখ মামুন-উর-রশিদ জানান, অগ্নিকান্ডের দিন সিড়ি ঘরে জেনারেটর থেকে সৃষ্ট আগুন পাশে থাকা টায়ার ও ভোজ্য তেলে লেগে যায়। যে কারণে ব্যাপক কালো ধোয়ার সুষ্টি হয়। ভবন মালিক নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপক কোন যন্ত্র স্থাপন করেন নি। ফলে আগুন ধরে ধোয়া সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় সহজেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads